কি ভাবে আমি আমার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারি?

বেলা পরে গেছে খানেক আগেই, একটু পরেই কলেজ ছুটি হয়ে যাবে। তবু সপ্তাহের এই ক্লাশটির জন্য সবাই অপেক্ষা করে। গত ছয় মাস হলো বাংলার নতুন অধ্যাপক এসেছেন এই বকুলপুর কলেজে, তিনিই এই সুন্দর ক্লাশের উদ্ধক্তা। বলা হয়েছে এটা উন্মুক্ত ক্লাশ, যে কোন প্রশ্নো নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

আজো তেমনি ক্লাশ চলছে, রুমে হঠাৎ পিন পতন নিঃস্বদ্ধোতা নেমে এলো, কনকের প্রশ্নো শুনে সবায় এ-ওর মুখে তাকিয়ে আছে, বাংলার শিক্ষক অরুন কান্তি জ্বানালার বাহিরে তারও দৃষ্টি পরে আছে, আনমনা। সবাই এখন প্রতিক্ষায় আছেন, সবার মধ্যে টান-টান উত্বেজনা, এখুনি তিনি কিছু বলবেন।

তিনি বলতে শুরু করলেন, জীবন তো আসলে তেমনি, যেমন করে আমরা ভাবি, যেমন করে আমরা বেড়ে উঠি, নাকি কনক ?

কনক মাথার এলো-মেলো চুল, জামার বোতাম ঠিক করতে করতে বলে, জ্বী-তা ঠিক আছে স্যার, কিন্তু আমাদের এই অভ্যস্ত জীবনে আমরা যে ভাবে বেরে উঠি সেটাকে যদি পরিবর্তন করতে চাই, তাহলে আমরা কি করতে পারি স্যার?

অরুন কান্তি স্যারের গলার স্বর আরো ভারী হতে লাগল, তিনি বল্লেন দেখ কনক আমার মনে হয় তোমার প্রশ্নটি আরো গভির ভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। আসলে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন? জীবন পরিবর্তনের জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?এবং কিভাবে সেটিকে চর্চার মাধ্যমে জীবনে প্রকাশ ঘটানো যায় আমাদের জানতে হবে।

কনক: জ্বী স্যার, আপনি ঠিক বলেছেন।

অরুন কান্তী: তাহলে এসো আমরা আগে দেখার চেষ্টা করি কি কি বিষয় আসলে আমাদের জীবনকে প্রতিদিন একটু একটু করে বিপদগামী করছে, তোমরা কি কেউ বলতে পারবে?

এবার সবার মধ্যে যেন প্রান ফিরে এলো, সবাই কথা বলতে শুরু করলো, স্যার আমার মনে হয় মীথ্যা আমাদের জীবনকে বিপদগামী করে।

স্যার আমার মনে হয় লোভ,

আমার মনে হয় অহোংকার, এর পর একে একে সবাই বলা শুরু করল, কেউ বলছে রাগ, কেউ ড্রাগ, কেউ বলছে পর্ণোগ্রাফি, অসৎ, কেউ আবার পরোনিন্দার কথা বলছে, কেউ নৈতিকতার অবক্ষই, অবাদ্ধতা, প্রলোভনের কথা, কেউ বলছে যৈানতার কথা, কেউবা পাঁপের কথা বলছে।

অধ্যাপক মহাশয় এবার সবার উদ্দ্যেশে হাত তুলে থামতে বল্লেন। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন, ছেলে-মেয়েরা তোমরা একদম ঠিক কথা বলেছ, আমার খুব ভালো লাগছে যে তোমরা সবাই বুঝতে পারছ যে কি বিষয় আমাদের সত্যি কারের জীবনকে ধ্বংষ করে দিচ্ছে।

এখন তোমরা বলো, সত্যিই কি তোমরা তোমাদের জীবন পাল্টাতে চাও? এবার সবাই তাদের হাত উচু করে বল্লো, জ্বী স্যার, আমরা আমাদের জীবন পাল্টাতে চাই।

অরুন কান্তি: তাহলে এসো এবার দেখা যাক কি কি ভাবে আমরা আমোদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি, আর এর জন্য প্রথমেই আমাদেরকে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কিছু কিছু বিষয়ে পদক্ষে নিতে হবে, যেমন;

আমাদের উদ্দেশ্য:

জীবনের উদ্দেশ্যে যদি আমরা কোন রকম মন্দতার মধ্য দিয়ে সাফল্য পেতে চায় অথবা আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ স্থির করি তাহলে অবশ্যই আমাদের কে তা পরিবর্তন করতে হবে।

নীর্ভরতা:

অবশ্যই আমাদের জীবন পরিবর্তনের জন্য আমাদের সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল হতে হবে। ভক্তিপূর্ন ভয়ের মধ্যে দিয়ে তার উপস্থিতি আমাদের অন্তরে উপলব্ধী করতে হবে।

সত্যের আয়না:

প্রতিদিনে একটি বার করে হলেও আমাদের মনের আয়নাতে সত্যের সম্মুখে দাঁড়াতে হবে, নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আমাদের অবস্থান, আমাদের লক্ষ্য, গন্তব্য ইত্যদি।

আকাঙ্খা:

সুন্দর জীবনের একটা আকাঙখা সব সময় আমদের মনের মধ্যে জাগিয়ে রাখতে হবে, সু্ন্দরের সাথে বেরে উঠতে হবে।

বিশ্বাস:

আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমরা কেবল তার রহমতে মধ্যে  জয়ী হতে পারি।

অনুতপ্ততা:

অনুতপ্ত হতে হবে আমাদের জীবনের মন্দ বিষয়গুলির কারনে, অনুতপ্ত হতে হবে মন্দের সাথে আমাদের বসবাসের জন্য।

শুরু করতে হবে:

আমরা শুধু পরিকল্পনা করতেই ভালোবাসি, কিন্তু মনে রাখতে হবে পরিকল্পনার সাথে সাথে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, কাজ শুরু করতে হবে।

প্রলোভন:

মনে রাখতে হবে জীবনে প্রলোভন আসবেই, কিন্তু আমাদের অবশ্যই প্রলোভন এরিয়ে চলতে হবে, কোন অবস্থাতেই প্রলোভনের কাছে নত হওয়া যাবেনা ।

সততা:

সততার মধ্যে নিজেকে উৎস্বর্গ করতে হবে, জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে হবে সততা, বেরে উঠতে হবে সততার মধ্যে দিয়ে।

এবং ধৈর্য্য,

যেহেতু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই মানুষ হিসেবে আমাদের কে ধৈর্য্য ধারুন করতে হবে, অস্থিরতা পরিহার করতে হবে, সকল মন্দতাকে পরিহার করে সুন্দরের সাথে বেরে উঠতে হবে, অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে, আর প্রতিদিন যদি এই বিষয়গুলো সঠিক ভাবে চর্চা করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের জীবনে পরিবর্তন আসবে।

সবার চোখে এখন মুগ্ধোতা, সবাই চেয়ে আছে শিক্ষকের দিকে। তারকথা থামতেই সবাই তালি দিতে শুরু করল, সেই তালির শব্দে দপ্তরীর ছুটির ঘন্টা মিলে যেতে থাকে, শব্দো গুলো বাতাশে উড়ে উড়ে ভেসে যেতে থাকে বহুদূরের পথে। আর বকুলপুর কলেজের বাংলার শিক্ষক যার বয়স পেরিয়েছে পঞ্চাশ বহু আগেই, সেই অরুন কান্তি যার ভারি চশমার ফ্রেমে ঝাপসা চোখ, প্রচন্ডো অভাবের মধ্যেও যিনি আশাবাদি, ক্লাশ শেষ করার আগে বরাবরের মতো তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গাইতে শুরু করে গান। আমরা করব জয়, আমরা করব জয়, আমরা করব জয় নীশ্চয়।

Follow me

You may also like...