সন্দেহ-তে কেন অন্ধ ?

একাকি আনমনে ডুবে থাকা আঁধারে, দিন চলে যায়- রাত চলে যায় অসহ্য যন্ত্রনাতে। তবু যায় না মনের সন্দেহ, তাই ঘোচেনা দ্বিধা-দন্দ, লাভ-লোকসানে বড় গরমিল, বিবেকের তালা বন্ধ।
তবু সন্দেহ, হায় সন্দেহ, শুধু সন্দেহ-তেই মানব জনম, শুধু সন্দেহ-তেই সাধন-ভজন, অন্তর চক্ষুর সুন্দর আলো হয়ে গেল সব অন্ধ ।
তবু সন্দেহ, হায় সন্দেহ, এই সন্দেহ আর পিছু ছাড়ে না, সব কিছুতেই মন্দ।
সন্দেহ তবু সন্দেহ.. মনের ঘরে অহর্নিশি
বসবাস দ্বিধা-দন্দ।
“সন্দেহ” খুব ছোট্ট একটি শব্দ কিন্তু ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে এর ভয়াবহতার কোন পরিমাপ নেই।
মন ভাঙ্গছে, ঘর ভাঙ্গছে, পরিবার তথা সমাজ ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে পেশির বল, সন্দেহ মনে দানা বাঁধলেই ভুল হয় আপন পর। কিন্তু কেন এই সন্দেহ? কেন এই দ্বিধা-দন্দের যন্ত্রনা বুকে পুষে রাখা? কেন পিছু ছাড়ে না সন্দেহ? সন্দেহ নামক মরন-ব্যধি কেন কুরে কুরে খায় সাধের জনম।
পরিচিত একটা গল্প আমরা সবাই জানি, হাঁটু পানিতে কাপড় ভিজে যাবার লজ্জায় যুবতি কন্যা খালের পাড়ে বসে আছে, অবস্থা দেখে হুজুর তাকে কোলে তুলে পার করে দিলেন, কিন্তু হুজুরের সাথে থাকা সহকারি হুজুরের মনে সন্দেহ – বড় হুজুরের মনে হয় একটু যুবতীদের প্রতি লোভ আছে।
তো দিনের শেষে এক সঙ্গে খেতে বসে ছোট হুজুরের মুখের দিকে তাকিয়ে বড় হুজুর প্রশ্ন করলেন, ”কি ব্যপার হুজুর, আপনার কি হয়েছে- সারা দিন চুপ-চাপ, কোন কথা নেই, কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে আপনাকে? শরীর কি খারাপ লাগতেছে”
প্রতি উত্তরে ছোট হুজুর বলেন বড় হুজুরকে, ”হুজুর সকালে আপনি যে এমন যুবতি কন্যারে কোলে তুলে পার করলেন তাতে আপনার পাপ হলো না?” এবার বড় হুজুর স্ব-স্নেহে তাকে বললেন, ”আমি সকালে এক জনকে সাহায্য করতে যদি একটু পাপ করে থাকি তাহলে সারা দিন আপনার মনের মধ্যে সেই পাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন এটা কি ঠিক কাজ হল? মনের ভেতর এই সন্দেহ না রেখে আপনি যদি তখনই প্রশ্নটা করতেন,তাহলে তো এই অস্থিরতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াতো না। সন্দেহ যে মানুষকে অন্ধ করে দেয়।”
আসলে এমন করেই আমরা দিনের পর দিন মনের ঘরে সন্দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়াই, অসহনীয় এক অস্থির যন্ত্রনা কুরে কুরে খায় আমাদের। আর এভাবেই আমরা মানব সমাজের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াই। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব করে পাঠালেন যেন সব কিছুর উপর কর্তৃত্ব করতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের মনের সন্দেহের কারণে আমরা মন্দের দাস হয়ে জীবন যাপন করি।
কিন্তু কেন এমন হয়?
শুধু মাত্র নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা? শুধু মাত্র অলস চিন্তার প্রতিফলন? অসহনশীল মনোভাব? সমঝোতার অভাব? অহংকার? দাম্ভিকতা? নিজেকে বড় করে দেখা? নম্রতার অভাব? মেরুদন্ড-হীনতা? মিথ্যে ছলনা? নাকি মেকি অভিনয়? আসলে জীবনটা কি এমনই যে নিজের অজান্তে শুধু অভিনয় করতে করতে এক রুপ থেকে অন্য রুপে, কখনও মিথ্যে, কখনও প্ররোচনায়, কখনও লোভে, কখনও..????
আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)কে শয়তান প্ররোচনায় ফেলে সন্দেহের বীজ বুনে দিয়েছিল তার মন ঘরে, যার কারনে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে পাপে পতিত হন তিনি, ফলশ্রুতিতে তাকে শাস্তি-স্বরূপ জমিনে প্রেরন করা হলো, আর আমরা মানব সমাজ এখন সেই সন্দেহের কারনে করা পাপের শাস্তি ভোগ করছি।
এ থেকে মুক্তি কোথায়? এ থেকে পরিত্রান কোথায়? কোথায় খুঁজে পাব তারে? কোন দরজাতে আঘাত করলে দরজাটা খুলে দেয়া হবে, যে দরজার ওপারে আছে অনন্ত পথ?
- কেন এত নৈতিকতার অবক্ষয়? - অগাষ্ট 26, 2019
- আমরা কেন আমাদের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দেই? - জুন 11, 2018
- কি ভাবে আমরা আমাদের বদ-অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারি ? - মে 8, 2018